মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলার বোরহানউদ্দিনে গত বছর তরমুজের ফলন কম হয়েছিল। এতে তরমুজ চাষীরা চরম বিপর্যয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এবার গত ১০ বছরের মধ্যে বাম্পার ফলন হয়েছে। তারপরও করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাজার চাহিদা কম থাকায় তরমুজ চাষীদের মূলধনও উঠছে না।
বোরহানউদ্দিনে ক্ষেতে পেকে নষ্ট হচ্ছে তরমুজ। সীমিত পরিসরে ট্রলার-ট্রাকে করে তরমুজ পরিবহনের ব্যবস্থা করা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এতে চাষীদের কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গোনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে নানা বাঁধার মুখে পড়তে হয় বলে চাষীরা জানান।
ফলে লাভ তো দূরের কথা, মূলধনের অর্ধেক টাকা উঠবে কি না, তাই নিয়ে সংশয়ে আছেন উপজেলার চাষীরা। করোনার নেতিবাচক প্রভাবে চোখে অন্ধকার দেখছেন তরমুজ চাষীরা। বহু কৃষকের পথে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় ৩২১ একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। তবে কৃষকরা বলছেন, এর পরিমাণ আরও অনেক বেশি। উপজেলা তেঁতুলিয়া নদী সংলগ্ন গঙ্গাপুর ইউনিয়নে ৮০ শতাংশের বেশি তরমুজ উৎপাদন হয়।
গঙ্গাপুর ইউনিয়নের শিকদার চরের অহিদ সর্দার জানান, ৮ একর জমিতে এবার ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বিক্রি ৪ লাখ টাকা হতে পারে। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে তরমুজ চাষ করে ফলন না হওয়ায় ৭ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।
সরেজমিন গঙ্গাপুরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরলতিফে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক শত একর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। ওই চরের তরমুজ চাষী তাজুল ইসলাম বলেন, ২৪ একর জমিতে জাম্বু জাগুয়ার, বিট ফ্যামিলি ও ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছি। ২৪ লাখ টাকা বিনিয়োগে ৬ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। সবমিলিয়ে আরও ৪ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হতে পারে। গত বছরও সাড়ে ৮ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছি।
চরলতিফ ও পাতার চরের চাষী লিটন মেম্বার বলেন, ২০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ২০ লাখ টাকা খরচের মাত্র ৪ লাখ টাকা উঠে এসেছে। খেতে যে তরমুজ আছে তাতে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা আসতে পারে।
ওই দুই কৃষক জানান, প্রথমে তরমুজ নৌপথে ট্রলার দিয়ে বরিশাল অংশে নিয়ে কুমিল্লা, সিলেট, কুমারকান্দি ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় পাইকারদের পৌঁছে দেয়া হয়। সড়কপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানাভাবে হয়রানি করে।
তরমুজ চাষীরা বলেন, আগে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এলাকায় এসে তরমুজ কিনে নিয়ে যেতেন। পরিবহনও করতেন তারা। আমাদের কিছুই করতে হতো না। এখন তারা তো আসছেই না, পাইকারদের আড়তে ৩-৪ দিন বসে থেকেও বিক্রি করতে পারছি না।
চাষীরা জানান, সরকার যদি তাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে পথে বসতে হবে।
তরমুজ কিনে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সোহেল জানান, গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় ১ হাজার তরমুজ চাষীদের কাছ থেকে কিনে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে আরও কেনার বরাদ্দ আসেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, বাম্পার ফলন হওয়ার পরও বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে চাষীরা লোকসানে পড়েছেন। কৃষি অফিস পরবর্তী সহায়তায় সব সময় তাদের পাশে থাকবে। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী জানান, তরমুজসহ যে কোনো কৃষিপণ্য পরিবহনে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহায়তা করবে।
ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল বলেন, করোনার কারণে প্রায় সব সেক্টরেই দরিদ্র মানুষ নানামুখী বিপদে পড়েছেন। আমি চাষীদের কাছ থেকে তরমুজ কিনে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেছি। আমাদের অন্য নেতৃবৃন্দকেও এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের জন্য বিশাল অংকের কৃষি প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। আলাদাভাবে এ ব্যাপারে কৃষি এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
Leave a Reply