মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন
মো. সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া: স্বস্তির নিঃশাষ ফিরে এসছে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়েচলা ভয়াল সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলিত তীরবর্তী হাজারো পরিবারের মধ্যে। জানাগেছে ১৯ আগস্ট বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইলুহার ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জনস্বার্থে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে বালু মহাল ইজারা বন্ধের দাবীতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলে ২০ আগস্ট বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচাররপতি কেএম কামরুল কাদেরের যৌথ বেঞ্চ বালু মহাল ইজারার ওপরে ২ মাসের স্থগিতাদেশ দেন।
একই সঙ্গে ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), আরডিসি ও সচিব জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি, জেলা পুলিশ সুপার, বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার অফিসার ইনচার্জকে জবাব চেয়ে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখিতদের বিবাদী করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম।
এর আগে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে জনস্বার্থে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলম বালু মহাল ইজারা না দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী,পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম ও বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের কাছে ডিও লেটার দিয়েছিলেন বলে তার বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানাগেছে।
সন্ধ্যা নদীর বালু মহাল ইজারা দরপত্র বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে লিখিতভাবে ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নির্দেশ’র কপি ১৯ আগস্ট বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে পৌঁছে। কিন্তু ভূমি মন্ত্রীর ওই চিঠি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার পাওয়ার পরেও যথাযথ তদন্ত না করেই ২০ আগস্ট সন্ধ্যা নদীর ৮ টি পয়েন্টে বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়।
এনিয়ে রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হাজারো পরিবারের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা নদী গর্ভে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বানারীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। একমাত্র সম্বল ভিটে মাটি ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃম্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিয়েছেন যাযাবর মানবেতর জীবন।
অনিয়মতান্ত্রিক বালু উত্তোলনের ফলে রাক্ষুসী সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করে। বালু দস্যুদের কারনে ইতোমধ্যে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী উপজেলার উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিন নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, জম্বদ্বীপ, ব্রাক্ষ¥নকাঠী, কাজলাহার, ডুমুরিয়া, ইলুহার, ধারালিয়া, বাসার, নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, গোয়াইলবাড়ি, খোদাবখসা, কালির বাজার,চাউলাকাঠি, মীরেরহাট ও খেজুরবাড়ি গ্রামের কয়েক হাজারো একর ফসলি জমি,অসংখ্য বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা,মসজিদ ও মন্দির সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। উপজেলার ইলুহার বিহারীলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়,মিরেরহাট ও জম্বদ্বীপ সাইক্লোন শেল্টার যে কোন সময় নদী গ্রাস করে ফেলতে পারে।
হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছ গ্রাম। উল্লেখিত গ্রামগুলো মানচিত্রে থাকলেও নদী গ্রাস করে ফেলায় গ্রাম গুলো বাস্তবে নেই। সম্প্রতি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শণ করে ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। গত জানুয়ারী মাস থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের নির্দেশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর ভাঙন কিছুটা কমে এসে জনমনে স্বস্তি দেখা দেয়।
এদিকে হাইকোর্ট বালু মহাল ইজারার ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং তাদের দাবী এই স্থায়ী হলে ছলানাময়ী ভয়াল সন্ধ্যা তার রাক্ষুসী রুপ পরিবর্তণ করে শান্ত হতে পারে,যাতে করে আর কোন ভাঙণ তীরবর্তী পরিবার হারাবেন না তাদের স্বপ্নের ঠিকানা।
Leave a Reply