সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:
সরকারের চলতি মেয়াদেও শেষ হচ্ছে না বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্ধিত ভবনের নির্মান কাজ। গত ১০ বছর পূর্বে শুরু নির্মানাধিন পাঁচ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটির এখনো প্রায় ৩০ ভাগ কাজ অসম্পন্ন রয়েগেছে। তাই পূর্ব ঘোষনা থাকলেও চলতি বছরেও কাটছে না রোগীদের চিকিৎসা সেবার ভোগান্তি। যদিও চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঁচশ শয্যার মডানাইজেশন অব এক্সটেনশন ভবনের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী গণপূর্ত বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে নতুন ভবনে রোগী বা বিভাগ স্থানান্তরের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।
গণপূর্ত মেডিকেল উপ-বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, দক্ষিণাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চলবাসির চিকিৎসা সেবার সর্বশেষ নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। তিনশ শয্যা থেকে কয়েক দফায় উন্নিত করা হয় পাঁচশ শয্যায়। সর্বশেষ কাগজে-কলমে এক হাজার শয্যায় উন্নিত করা হয় এই হাসপাতালটি।
এদিকে চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি বাড়তে থাকতে রোগীর সংখ্যাও। গত কয়েক বছর ধরেই এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারশ রোগী ভর্তি হচ্ছে। সে অনুযায়ী ভর্তি রোগীদের সংখ্যাও প্রতিদিন সর্বনিম্ন দেড় হাজার থেকে দুই হাজারে গিয়ে ঠেকছে। পর্যায়ক্রমে সিসিইউ রোগীদের জন্য একটি দ্বিতল ভবন করা হয়। যেখানে বার্ন, আইসিইউ এবং সিসিইউ রোগীদের ভর্তি রাখা হচ্ছে। তাতেও রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে ১০ তলা ভিত্তিতে সাততলা বিশিষ্ট আরো একটি ভবন নির্মানের উদ্যোগ নেয় পূর্বের মেয়াদী সরকার। সে অনুযায়ী ২০০৮ সালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্ধিত ৭তলা ভবন নির্মাণে ৩০ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। হাসপাতালের পূর্ব পাশে ৩০ শতাংশ জমির উপর ৫শ শয্যা বিশিষ্ট ভবন নির্মান কাজও শুরু করে নির্ধারিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার সিকদার আজাদ কনস্ট্রাকশন।
কিন্তু পরবর্তীতে দু’তলা কর্তন করে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ তলা ভবন নির্মানের সংশোধিত কার্যাদেশ দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়। ভবনটিতে রোগী ভর্তির ওয়ার্ড ছাড়াও নীচতলায় বহিঃর্বিভাগ, দ্বিতীয় তলায় প্রশাসনিক ব্লক ও রোগীদের জেনারেল ওয়ার্ড, তৃতীয় তলায় পোষ্ট অপারেটিভ ও কেবিন, চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় রাখা হয় ওটি ব্লক। ভবনটি ওঠা নামার জন্য চারটি লিফট ও পৃথক পাঁচটি সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অপরদিকে চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ভবন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরের সময় বেঁধে দেয়া হয় কার্যাদেশের মাধ্যমে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও ধীরগতির কারনে ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন না হতেই নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আর তাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি ২০১১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ভবন হস্তান্তরের জন্য নতুন করে সময় বেঁধে দেয় গণপূর্ত বিভাগ। তাতেও কাজের অগ্রগতী না থাকায় ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ থেকে অব্যহতি দিয়ে তার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। আর তাই শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গিয়ে গড়ায়। সেই সাথে বর্ধিত ভবন নির্মান কাজ পুরোপুরি ভাবেই স্থবির হয়ে পড়ে।
সর্বশেষ আইনী জটিলতা কাটিয়ে ২০১৪ সালের নতুন করে ভবনের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে দরপত্র আহ্বান করে গণপূর্ত বিভাগ। এজন্য ব্যায় নির্ধারন করা হয় ১৯ কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি তারা। কেননা আহ্বানকৃত দরপত্রের উপর পুনরায় উচ্চ আদালতে রীট আবেদন করে পূর্বের ঠিকাদার। সেই অবস্থানে ঝুলে থাকে শেবাচিম হাসপাতালের মর্ডানাইজেশন অব এক্সটেনশন ভবনের নির্মান কাজ। সেই সুযোগে জরাজীর্ন ভবনটিতে মাদক সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের আঁকড়া এবং গরু-ছাগলের ভাগারে পরিনত হয় ভবনটি।
এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি। তারা দফায় দফায় বিষয়টি নিয়ে মিটিং, মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনি কমিটির সভাপতি মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হস্তক্ষেপ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এর সহযোগিতায় পাঁচতলা বিশিষ্ট ভর্তিত ভবনটির কাজ শুরুর লক্ষ্যে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে গণপূর্ত বিভাগ। তাছাড়া বরিশাল সফর কালে চলতি বছরের মধ্যেই ভবনটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করার ঘোষনা দিয়ে যান স্বাস্থ্য মন্ত্রী। কিন্তু বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদেও নির্মান কাজ সম্পন্ন করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
গণপূর্ত বিভাগ বরিশাল বিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার বিশ্বাস বলেন, চতুর্থ দফায় টেন্ডারে ১০ পার্সেন্ট লেসে ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকায় শেবাচিমের বর্ধিত ভবনের অবশিষ্ট কাজের ঠিকাদারী পায় মেসার্স কহিনুর কনস্ট্রাকশন। চুক্তি অনুযায়ী গত এপ্রিলে ভবনটি হস্তান্তরের কথা ছিলো। কিন্তু তা না পারায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ভবনটির শতভাগ কাজ শেষে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন আশাব্যক্ত করেন তিনি।
নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ভবনের গুরুত্বপূর্ণ যে কাজগুলো সহ ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু ফিনিসিং এর কাজ চলছে। যার মধ্যে রয়েছে টাইল্স, গ্রাউন্ড ফ্লোর, ভবনের বাইরে সাবস্টেশন বির্ল্ডি, রেলিং, টয়লেট ও দ্বরজা-জানালার কাজ চলছে। ওই কাজ শেষে হলে ভবনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হবে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন বিশ্বাস জানিয়েছেন।
Leave a Reply