বরগুনায় শতবর্ষী আজাহার শরীফের দিন কাটছে যেভাবে Latest Update News of Bangladesh

রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বরগুনায় শতবর্ষী আজাহার শরীফের দিন কাটছে যেভাবে

বরগুনায় শতবর্ষী আজাহার শরীফের দিন কাটছে যেভাবে




বরগুনা প্রতিনিধি॥ ‘দাদা আর যাবোনা ওই ইশকুলে ল্যাখতে’ নাতি নাতনিদের আবদারে শেষ বয়সে গেয়েই শোনালেন বিখ্যাত যাত্রাপালা ‘গুনাই বিবি’র গানটির দু’খানি লাইন।

 

১০৮ বছর বয়স আজাহার শরীফের। তিনি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ঐহিত্যবাহী কালমেঘা ইউনিয়নের বাসিন্দা। স্কুলের ভাঙাচোরা সংযোগ সড়কটি পাথরঘাটা উপজেলা সদরে যাতায়তের মূল সড়কের সাথে মিলেছে যেখানেই বটবৃক্ষের কোল ঘেঁষে ইউসুফ শরীফের একখানি নড়বড়ে ঘর।

 

বড় ছেলে ইউসুফের ঘরের পেছনে খুপড়ি ঘরে থাকেন আজাহার শরীফ। বয়সের ভারে শরীরটা অচলপ্রায়। চোখেও দেখতে পাননা ঠিকমতো। খুপড়ি ঘরেই কাটে তার দিবারাতি। বছর পাঁচেক আগে স্ত্রী জবেতুন্নেসাও ওপাড়ের বাসিন্দা হয়েছেন। ভাইয়েরাও আর কেউ বেঁচে নেই, শুধু আছেন তিনিই। ছেলে ইউসুফের শ্বাসকষ্ট রোগ, পরিশ্রম করতে পারেন না। আয় রোজগার বলতে এক টুকরো জমির ফসল। ইউসুফের ওপরই বৃদ্ধ বাবার দায় দায়িত্ব। ছেলে আর নাতি নাতনিদের নিয়েই কাটছে তার দিন। জুটলে খান, না জুটলে টু শব্দটিও নেই, পড়ে থাকেন বিছানায় একা।

কেমন কাটিয়েছেন শৈশব কৈশোরে? -বাবার বিস্তর জমিজমা ছিল সেকালে। প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। এ পাড়া ও পাড়ায় আড্ডা গান আর খেলাধূলা দূরন্তপনায় মেতে থাকতেন দিনভর। সন্ধ্যা বেলায় বাড়িতে আসর বসাতেন হালুটিয়ারা। গভীর রাত অব্দি চলত গান পুঁথিপাঠসহ বাঁশের বাঁশির সুর। সেখান থেকেই একজনকে গুরু মেনে শিখেছিলেন বাঁশি বাজানো। তখনকার দিনে গ্রামে যাত্রাপালার দলের খুব কদর। সেই দলে যোগ দিয়ে বাঁশির সুরের ঝংকারে মাতিয়ে তুলতেন দর্শক। কলের গান ছিল তার। কলের গানে শুনতেন তৎকালীন যাত্রাপালা আর পুঁথি।

শুধু তাই নয়, এলাকায় তৎকালীন দুর্দান্ত এক ফুটবল খেলোয়াড়ের নাম আজাহার শরীফ। মেইন ব্যাক হিসেবে ডাক পড়তো জেলার বাইরেও। পেয়েছেন অনেক পুরস্কারও। ‘ একবার তো বলই হারিয়ে গিয়েছিল এক খেলায়। কালমেঘা স্কুল মাঠে খেলা চলছে। গোল পোস্টের সামনে থেকে প্রতিপক্ষের দিকে কিক নিলেন আজাহার। বল উড়ে গেল প্রতিপক্ষের গোলবার উপর দিয়ে খাল পেরিয়ে আহের তালুকদারদের সুপারি বাগানে। পরে বলই পাওয়া গেল না আর। খেলা হলো নতুন বলে আনিয়ে।

ছোট্ট খুপড়ি ঘরে বন্দি আজাহার সেইসব দিনের স্মৃতিরচারণ করলেন। ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানিদের শাসনামলের কথাও অস্পষ্ট মনে আছে।

বলেন- ‘আল্লাহ পড়ানডা বাঁচিয়ে রাখছে, তয় খুব কষ্টে। পোলাডার কামাই নাই, জোটলে খাইতে দেয়- না জোটলে নাই’, চোখ ভারি হয়ে আসে তাঁর।

বিছানাটাও শক্ত কাঠের উপর কাঁথায় পাতানো। বলেন, ‘ওষুধ পথ্য লাগে কিনতে পারেনা ওরা, চোখের সমস্যায় ডাক্তার দেখাতে পারিনা দাদু।

ছেলে ইউসুফ বলেন, ‌বাবার বয়স এখন ১০৮ বছর। এই বয়সেও তিনি অনেকের তুলনায় চেয়ে সুস্থ আছেন। আমি শ্বাসকষ্টের কারণে কাজবাজ করতে পারিনা, আয় নেই, পরিবারের অনটনে দিন কাটে। বাবাকে নিয়ে একপ্রকার কষ্টেই দিনাতিপাত করতে হয়। কিন্ত কি করবো কিছু করার তো নেই।

ঈদের আমেজ নেই, নেই নতুন পোশাকের চাহিদাও। শুধু দু’ মুঠো খেয়ে বাঁচতে চান আজাহার। বয়স্ক ভাতার জোগান হয়েছে স্থানীয় মেম্বরের সহায়তায়। কিন্ত এই এক বয়স্ক ভাতার কারণে আর কোনো সরকারি সুবিধাই জোটেনা আজাহারের।

যোগাযোগ করা হয় স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসির উদ্দীনের সাথে। তিনি বলেন- ‌‘নিয়মানুসারে একটি ভাতা প্রাপ্তদের অন্য সহায়তার দেয়ার বিধান নেই। তবুও তাঁর জন্য চেষ্টা করে দেখবো যদি কোনো সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD