মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন
স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী॥ বরগুনার বেতাগীতে বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে এসব মানুষ চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে।
স্থানীয়রা জানায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময় একটানা প্রবল বর্ষণ ও প্রায়শই নদীর পানি বৃদ্ধি এবং পৌর শহরের পশ্চিম দিকে শৌলজালিয়া এলাকায় ছৈলার চর নামক একটি নতুন চর জেগে ওঠায় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে পূর্ব পাড়ে বেতাগীর পৌর শহর এলাকায় ভাঙণের তীব্রতা বাড়ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দিন দিন অব্যাহত ভাঙনে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিষখালী নদীর পূর্ববর্তী এলাকায় বেতাগী বন্দর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দক্ষিণবাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠবাজার, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, সনাতন ধর্মালম্বীদের শত বছর পুরোনো কালি মন্দির ও শ্মশানঘাট, অতিথিদের থাকার ডাক বাংলো, ঝোপখালী গ্রাম, পুরোনো থানাপাড়া, কেওড়াবুনিয়াসহ বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে হুমকীর মুখে ২০ হাজার পরিবার। ৩ কিলোমিটারব্যাপী ভাঙনের কবলে পাল্টে যাচ্ছে বেতাগীর মানচিত্র।
ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিষখালী নদীর পশ্চিম দিকে ঝালকাঠী জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলা, পূর্বদিকে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা অবস্থিত। উত্তরে ঝালকাঠীর সুগন্ধ্যা নদী ও বরিশালের কীর্ত্তনখোলা নদী প্রবাহমান। দক্ষিণে বলেশ্বর নদী ও বঙ্গোপসাগরের সাথে প্রবাহিত। নদীর স্রোত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরোনো থানা পাড়ার বিপরীত দিকে চর জেগে উঠায় নদীর স্রোত পরিবর্তিত হয়ে পূর্বদিক বেতাগী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে ভেঙে যাচ্ছে বেতাগীর এ জনপদ।
কাঠবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও দোকান মালিক অধ্যক্ষ মো. রফিকুল আমিন বলেন, সরকারের বন্দর রক্ষা তথা কাঠবাজার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তা না হলে নদী যেভাবে ভেঙে যাচ্ছে ২/১ বছরের মধ্যে কাঠবাজারের অস্তিত্বই থাকবে না।
শত বছরের পুরোনো সনাতন ধর্মালম্বীদের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী কালিমন্দির আর কিছুদিনের মধ্যে বিষখালী নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বন্দন ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি ও উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি পরেশ চন্দ্র কর্মকার বলেন, বেতাগী বন্দর অতি পুরাতন। এ বন্দরের কালীমন্দির ও শ্মশানঘাট রক্ষার জন্য সরকারের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সোবাহান বলেন, আমরা অরক্ষিত অবস্থায় আছি। সরকার যদি বর্ষা মৌসুমের মধ্যে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয় তবে বেতাগীর অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, নদী ভঙনরোধে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। প্রয়োজীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে ভাঙনরোধ কাজ হবে।
বর্তমান সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম গত ১৪ জুন বেতাগীর বিষখালী নদীতে ভঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, বেতাগী পৌর শহরসহ বিষখালীর অব্যাহত ভাঙনকবলিত এলাকা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply