সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঝালকাঠীর নলছিটি অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে নিয়ম-নীতি অমান্য করে শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু (এঙ্কাভেটর) মেশিনে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য গ্রামের কর্মহীন মৌসুমে স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থান, স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কর্মক্ষম দুস্থ পরিবারগুলোর সুরক্ষা কার্যক্রম ভেস্তে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা গেছে, ডানিডা প্রকল্পের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নলছিটি উপজেলায় জলবায়ু সহনশীল গ্রামীন অবকাঠামো প্রকল্প (পৎৎরঢ়) এই কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়ন লক্ষে উপজেলাধীন ৫ নং সুবিতপুর ইউনিয়ন ইছাপাশা কলেজ ব্রীজ থেকে ফকির বাড়ী হয়ে মুসল্লি বাড়ির শেষ মাথা পর্যন্ত কাজ চলছে ।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রয়ারি এ কর্মসূচির কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দে প্রকল্পটির কাজ হচ্ছে। এতে হতদরিদ্র শ্রমিকের সংখ্যা (তালিকাভূক্ত) ৩৮ -৪০ জন। প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক দুইশত টাকা মজুরিতে প্রকল্পে সকাল আট’টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করবেন।
সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রকল্পে কাজ চলবে। টানা ৪০ দিনের এই কাজে প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি বৃহস্পতিবার নিজের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মজুরির টাকা উত্তোলন করবেন। এক্ষেত্রে যার যার জব কার্ড ব্যাংকে প্রদর্শন করতে হবে। তবে খোজ নিয়ে জানা গেছে, এই উপজেলায় কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে কোনো নিয়মনীতি মানছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বরাদ্দের টাকা বাগিয়ে নিতে প্রকল্পে শ্রমিক তালিকায় স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। শ্রমিক তালিকায় ইউপি সদস্যে তার পরিবারের সদস্যসহ নিকট আত্মীয় ও স্বজনদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শ্রমিকদের জব কার্ড ও মজুরি উত্তোলনের ব্যাংক হিসাবের চেক বই সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য তুলে নিয়ে গিয়ে ইউপি সচিবের কাছে জমা রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় শ্রমিক মজুরির টাকা নিজেরা তুলে নিতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ইতিমধ্যে রফাদফা করেছেন বলেও একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত ২ দিন সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলাধীন ৫ নং সুবিতপুর ইউনিয়ন ইছাপাশা কলেজ ব্রীজ থেকে ফকির বাড়ী হয়ে মুসল্লি বাড়ির শেষ মাথা পযন্ত চলমান কাজে কোনো শ্রমিক উপস্থিতি নেই।
সেখানে শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু মেশিনে মাটি কাটা হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দর টাকা বাগিয়ে নিতে ভেকু মেশিনে মাটি কাটা হয়েছে। অথচ এ প্রকল্পে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘন্টায় ১৮ থেকে ২ হাজার টাকা চুক্তিতে দৈনিক মাটি কাটা হয়েছে। ইউপি সদস্য মোঃ ফিরোজ আলম জোমাদ্দার সাংবাদিকদের বলেন, ভেকু মিশন দিয়েই মাটি কাটা হয়নি । স্থানীয় এক ব্যক্তি মাছ চাষাবাদ করার জন্য ঘের করবেন বিধায় ভেকু মেশিন এনেছেন এবং তার কাজ করেছেন । আমার প্রতিপক্ষরা এই উন্নয়ন কাজ বাধা গ্রহস্ত করতেই আমার বিরুদ্বে এমন অভিযোগ দিচ্ছে ।
এদিকে ঐ ইউপি মেম্বারের এমন দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে সম্প্রতি বরিশাল দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় অনুলিপি দিয়েছে এলাবাসীর একটি পক্ষ । এ ব্যাপারে ৫নং সুবিতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মন্নান সিকদার তালিকাভূক্ত হতদরিদ্র শ্রমিক দিয়ে কাজ না করানোর কথা স্বীকার করে বলেন, এই কর্মসূচি সরকার গরিব মানুষের জন্য চালু করেছে। যারা গরিব মানুষের মজুরির টাকা আত্মসাৎ করতে চায়, তাদের পক্ষে আমি নেই। একবার নয়, শতবার তাদের বলা হয়েছে কিন্তুু আমার কথা শুনেনি তারা ।
এ ব্যাপারে নলছিটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি । কর্মসূচি প্রকল্পে ভেকু মেশিনে কাজ করার নিয়ম নেই। তবে ভেকু মেশিন দ্বারা কাজ করার বিষয় অভিযোগ পেয়ে দ্রুত সময়ের ভিতরে ভেকু মেশিন দিয়ে করানো কাজটি বন্ধ করে দেয়া হয় । তিনি বলেন, এই কর্মসূচির শ্রমিক মজুরি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। ব্যাংক ম্যানেজার যদি যথাযথ নিয়মে শ্রমিকের টাকা শ্রমিকের হাতে দেন, তাহলে এই কর্মসূচিতে অনিয়মের সুযোগ নেই।
Leave a Reply