রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
নিয়ামুর রশিদ শিহাব, গলাচিপা(পটুয়াখালী) সংবাদদাতা:গলাচিপায় টানা তিন দিনের বৃষ্টির কারনে রবিশস্যে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০০ কোটি টাকা বলে ধারনা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।জানা গেছে, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে পানি জমে তরমুজ ছাড়া রবিশস্য আলু, মরিচ, মুগডাল, খেসারী ডাল, ফেলন ডাল, মিষ্টি কুমড়া সহ শাক-সবজি ও বাদাম চাষীদের ক্ষেতে ফসল পচন ধরার উপক্রম হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমের মত অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে প্রতিটি ক্ষেতে পানি জমে ফসল তলিয়ে গেছে। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ক্ষেতের পানি অপসারণের জন্য সেলো মেশিন ও বালতি দিয়ে পানি নিস্কাশনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষেতে পানি জমে ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মূখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
গলাচিপা উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা রয়েছে। এ উপজেয়ায় দেড় শতাধিক খাল আছে। যা এক সময় পানি চলাচলের মাধ্যমে কৃষকের উপকারে আসত। সেই খালগুলো প্রভাবশালীরা দখলে খাস জমি হিসেবে বন্দোবস্ত নিয়ে বাঁধের মাধ্যমে মাছ চাষ করছে। যার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। একাধিক বার উপজেলা প্রশাসন ও কৃষিবিভাগ খাল গুলো প্রভাবশালীদের দখল থেকে মুক্ত করতে কাগজে কলমে চেষ্টা চালালেও যা বাস্তবে কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। ফলে কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে রবিশষ্যের ১শত ৮০কোটি ৫০লক্ষ ৬২হাজার ৫শত টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার তরমুজ-৭৬০০ হেক্টর, আলু-৩০০ হেক্টর, মুগডাল-১৫০০ হেক্টর, খেসারী- ১০৫০ হেক্টর, ফেলন ডাল-২৪৫০ হেক্টর, বাদাম-১৮০০ হেক্টর, মরিচ- ২০৫০ হেক্টর ও মিষ্টি কুমড়া সহ শাক-সবজি-৭০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। উপজেলায় মোট উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে, তরমুজ- ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টন, আলু- ৩০হাজার টন, মুগডাল- ১হাজার ৫শত টন, খেসারী- ২ হাজার ১শত টন, ফেলন- ৩ হাজার ৬শত ৭৫ টন, বাদাম- ৫ হাজার ৬শত ২৫ টন, মরিচ শুকনা- ৪ হাজার ১শত টন ও মিষ্টিকুমড়া সহ শাক-সবজি-২৬ হাজার ২৫০ টন। কিন্তু অতি বৃষ্টিতে রবি ফসলের মধ্যে আলুর ক্ষতিই সবচেয়ে বেশী। আলু শতকরা ৪০%, তরমুজ ৩০%, মুগ ডাল ২০%, ফেলন ডাল ১৫%, খেশারী ডাল ২৫%, মরিচ ১৫%, বাদাম ১০% ও মিষ্টি কুমড়া সহ শাকসবজি ১০% ফসল নষ্ট হয়েছে।
এ ব্যাপারে মুরাদনগর ও বোয়ালিয়া গ্রামের আলু চাষী মুছাব্বার, মামুন, মোশারেফ চৌকিদার ও জাকির ফকির জানান, প্রত্যেকেই দেড় একর থেকে ২একর জমিতে আলু চাষ করেছে। ফলন ভালোই হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে অতি বৃষ্টিতে আলু ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আলু গাছ ও আলুতে পচন ধরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আলু ক্ষেত থেকে পানি নিস্কাশন করার জন্য বিভিন্ন রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা। যদি কোন রকম পচন দেখা দেয় তাহলে তাদের পথে নামার উপক্রম হবে।
তরমুজ চাষী জয়নাল মল্লিক কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ১হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি, হঠাৎ অতি বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে তরমুজ গাছে ফাংগাস রোগে আক্রমন করেছে। ক্ষেত থেকে পানি নিস্কাশনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অতিরিক্ত পানিতে কিছু গাছ মরে গেছে। সুদে টাকা এনে তরমুজ চাষ করেছি। যদি কোন রকমে তরমুজের ফলন না পাই তাহলে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবেনা।
খেসারী চাষী বাতেন চৌকিদার জানান, ৪একর জমিতে খেসারী ডাল চাষ করেছি। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে ক্ষেত সম্পূর্ন পানিতে তলিয়ে গেছে। সেচের ব্যবস্থা করেছি। হয়ত কিছুটা হলেও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ডাল চাষী আলাউদ্দিন সিকদার জানান, আমি সাড়ে ৩একর জমিতে ফেলন ডাল চাষ করেছি। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে ক্ষেত পুরো তলিয়ে গেছে পানিতে। সেচের ব্যবস্থা করেছি। তবে কিছু গাছ মরে গেছে।
এ ব্যাপারে গলাচিপা সদর ইউনিয়নের দায়িত্বে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সাধারন কৃষকদের এই মুহুর্তে মাঠে থেকে ক্ষেত পরিদর্শন, পানি নিস্কাষন ও কিছু ক্ষেতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করে পচন রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করার পরামর্শ দিচ্ছি।
এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে রবিশস্যে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। তবে উপজেলা উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছে। এতে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে ধারনা করছেন।
Leave a Reply