শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন
মো: শওকত হায়দার জিকো॥
‘জম্মু ও কাশ্মীর’ নিয়ে আলোচনা বা বিশ্লেষণ করলে দিন-রাত শেষ হবে, কিন্তু আলোচনা বা তার ইতিহাস শেষ হবে না। তাই আলোচ্য বিষয়ের আগে কিছু ইতিহাস বিশ্লেষণ না করলেই নয়। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত ইংরেজরা ভারত মহাদেশ শাসন করেছেন তা আমরা সবাই জানি। ভারত মহাদেশকে স্বাধীনতা দেবার পূর্বে, তাঁরা কিছু কু-কর্ম করে গেছেন তার একটি ফসল ছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলা এবং বিদ্ধমান কাশ্মীর। যদিও তৎকালীন পূর্ব বাংলা সরাসরি স্বাধীনতা দাবি করেনি তবে কাশ্মীরের শাসকরা স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। সেই সময় কাশ্মীরের রাজা ছিলিন ”হরি সিং”। তিনি ইংরেজদের কাছে স্বাধীনতা দাবি করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা তা না দিয়ে বরং হরি সিংকে তাঁদের ইচ্ছে মতো ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে বলেন।
আর তখনি জনগণের মধ্যে দ্বিমত দেখা দেয় কে কোন দেশের সাথে যাবেন। কোন কোন পক্ষ রাজি ভারতে যেতে কেউ বা পাকিস্তানের সাথে। তবে কোন পক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এরই মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তান আলাদা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইংরেজরাও দেশ ২ ভাগ করে ২ দেশকে দিয়ে চলে গেলেন কাশ্মীর ইস্যু সমাধান না করে। পাকিস্তান এবার তার স্বাধীনতার পর ঠিক ১৪ আগস্টের পরেই তাঁরা কাশ্মীরে আক্রমণ করে, কাশ্মীরের জনগণ অধিকন্তু মুসলিম হওয়ার কারনে এরই মধ্যে পাকিস্তান মুল ভূখণ্ডের ৩৫ ভাগের মতো পাকিস্তানের অধীনে চলে যায়। দখল নিয়ে নেয় পাকিস্তান। তবে কাশ্মীরের জনগণ এই আক্রমণকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা স্বাধীনতাতে বিশ্বাসী ছিল।
যখন তাঁরা স্বাধীনতা পেলো না তাই বাকি অংশ নিয়ে দেনা পাওনা চলে ভারতের সঙ্গে। তৎকালীন নেতা শেখ আব্দুল্লাহ এবং নেহেরুর মধ্যে আলোচনা চলে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে। শেখ আব্দুল্লাহ এবং নেহেরুর আলোচনাতে অবশেষে সিদ্ধান্তে আসে যে কাশ্মীরের বাকি অংশটুক ভারত নিয়ন্ত্রণ করবে। যেখানে কাশ্মীরের জনগণ তাঁদের স্বাধীনতা বাদ দিয়ে ‘ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের’ সাথে যুক্ত হতে থাকে। কারন নেহেরু তাঁদের বিশেষ মর্যাদার আশ্বস্ত করেন। তাই আর্টিকেল ৩৭০ দেওয়া হয়েছিল যে কাশ্মীরিদের থাকবে আলাদা নিজস্ব পতাকা সংবিধান। তাই তাঁরা ‘ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের’ সাথে যুক্ত হয়েছেন।
এই অঞ্চলটি প্রধানত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। ভারতের এই কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলটির দক্ষিণে ভারতের হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাব রাজ্য দুটি অবস্থিত।জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তরে পাক-অধিকৃত গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চল ও পূর্বে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ অবস্থিত। এই অঞ্চলের পশ্চিমে ও উত্তরপশ্চিমে লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোলের ওপারে কাশ্মীরের পাকিস্তান-শাসিত অংশ আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিত-বালতিস্তান অবস্থিত।জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকা এই দুই অঞ্চল নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি গঠিত। শ্রীনগর এই অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী এবং জম্মু শীতকালীন রাজধানী। কিন্তু ভারত এখন ৩৭০ বাদ দিয়ে তাঁদের রাজ্য ২৯ থেকে ২৮ করে দিলেন।
কাশ্মীরের ইতিহাস আমরা সবাই জানি যে এই কাশ্মীরকে নিয়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে ৩টি যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। এখন বিষয়টি হচ্ছে এই কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ২ দেশের মধ্যে বিরোধ চরমে চলে গেছে। তবে গত ৩ দশক ধরে কাশ্মীরিরা স্বাধীন হতে চাচ্ছেন। তাঁরা ভারত ও না পাকিস্তান ও না কারো মুখাপেক্ষী হতে চাচ্ছেন না। এখন এই ৩৭০ বিলুপ্তির মধ্যে দিয়ে যা করলো। তা হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর (উর্দু ভাষাভাষী: جموں و کشمیر) হলেও এটি ভারতের একটি বিতর্কিত জোর পূর্বক দখলকৃত কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল যা এতদিন সতন্ত্র রাজ্য ছিলো। কিন্তু ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার ৫ই আগস্ট ২০১৯ইং তারিখে এই মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটিকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে গেজেট জারি করে যা সাধারণ কাশ্মীরিদের মারাত্মক ভাবে ব্যাথিত করেছে। এই সময়ে কাশ্মীরে সমস্ত রাজনীতিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।কাশ্মীর উপত্যকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। জম্মু অঞ্চলে অনেক হিন্দু মন্দির থাকায় এটি হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।
কিন্তু সব কিছু এখন একটি হুমকির মধ্যে ফেলে দিল মোদী সরকার। এই উপমহাদেশে একটা বিশৃঙ্খলার দারে নিয়ে গেলেন ভারতীয় শাসকগণ। এমনিতে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চরমে ছিল এখন উস্কে দিলোভ আরও বহু গুনে। এমনিতে কাশ্মীরে এখন ১৫০০০ এর বেশি সেনা রয়েছে তারপর তা ক্রমশ বাড়বে। সত্যিকারে এই জায়গাতে একটা দেশ থাকতে পারে না। সুতারং বেশ অসুবিধার মধ্য দিয়ে যাবে এই উপমহাদেশ। আমাদের বাংলাদেশিদের বেশ চিন্তা করার আছে যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছেন যে তাঁরা ৩৭০ বা ৩৩৫ এ পরিবর্তন আনবেন এবং তাঁদের মেজরটি থাকার কারনে তা করতে পারবেন ইচ্ছে মতন করে ।
তবে বিজেপি এর পরে যে কাজটি করবেন, যা নিয়ে আমদের বেশ মাথা ব্যেথার কারন হবে এমনকি বড়োসড় ঝামেলাতে যুক্ত হয়ে যেতে পারে।যেমন এর পর বিজেপি করবেন এন আর সি পরিবর্তন।ইতিমধ্যে প্রধান মন্ত্রী ফাইল সাইন করে দিয়েছেন ।এবং এবার বাংলাদেশ জড়িয়ে যাবে এই উপমহাদেশ ফ্যাক্টরে ।আর আসামে যদি এনআরসি পরিবর্তন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ৩১ আগস্টের মধ্যে ।যারা এই পরিবর্তনের লিস্টের নাম রয়েছে , যাদের বহিরাগত বলা হবে তাদের মুষ্টিমেয় মুসলিম এবং যাদের বাংলাদেশি বলা হয়ে থাকে।
যদি তাঁরা এই এন আর সি পরিবর্তনে যায় তাহলে বাংলাদেশ এবার একটি গভীর সঙ্কটে পরবে বলে মনে হচ্ছে।কারন এই ৪০ লক্ষ মানুষকে মুসলিম এবং বাংলাদেশি প্রমান করা হচ্ছে সাথে সাথে একটা পুষ ব্যাক করার পায়তারা তাঁরা করবে।সুতারং গভীর সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে পুরো উপমহাদেশ। ওভার অল ধর্মীয় উগ্রবাদ বাড়বে পুরো কাশ্মীর জুড়ে ।সাউথ এশিয়াতে আলকায়দার একটি শাখা হয়েছে এমনিতে আইএস চোখ রাজ্ঞাচ্ছে । মোট কথা , যে আমরাও বেশ বেকায়দাতে থাকবো পুড়ো উপমহাদেশের সাথে।
মো: শওকত হায়দার জিকো, সম্পাদক ইনিউজ৭১
Leave a Reply