মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ বাঁশ, বেত ও হোগলা শিল্পেও অন্যান্য পেশার মতো করোনার প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি। বাঁশ, বেত ও হোগলাকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছেন বোরহানউদ্দিনের পাঁচ শতাধিক পরিবার। দীর্ঘদিন হাট-বাজার বন্ধ থাকায় ওই শিল্পের কারিগরদের উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন সীমিত আকারে বাজার খুললেও চলতি ভরা মৌসুমে বাজারে বাঁশ, বেত, হোগলাপাতা নির্মিত পণ্যের চাহিদা নেই। ফলে কষ্টে আছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। জীবন জীবিকার তাগিদে ওই পরিবারগুলোর পুর্বপুরুষের এই পেশা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি এ শিল্পের ভবিষ্যৎ অনেকটা হুমকির মুখে।
ওই শিল্পের কারিগররা জানান, ওয়াজ মাহফিল, কীর্ত্তন, বিয়ে সহ নানা অনুষ্ঠানে হাজার হাজার হোগলা পাতার পাটি বিক্রি হত। চৈত্র-বৈশাখ মিলিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় প্রতিদিনই অনুষ্ঠান হত। ওইসব অনুষ্ঠানে পাটি দিয়ে নির্ঘুম ব্যস্ত থাকতে হত। এছাড়া এ বছর বৃষ্টির কারণে রবিশষ্য মার খাবার ফলে বাঁশ-বেতের সাজি, চুকরি. ঝুড়ি, ডালির চাহিদা নেই। অপরদিকে ব্রিক ফিল্ডেও কয়েক হাজার সাজির বাজার ছিল। ওইগুলো করোনার কারণে প্রশাসন বন্ধ রাখছে। বৈশাখী মেলায় বাঁশ বেতের তৈরী সৌখিন পণ্য চেয়ার,টেবিল, হ্যাট, রকিং চেয়ার, ফুলদানী,কলমদানী, আয়নার ফ্রেম সহ নানা রঙের বাহারি পণ্য বিক্রি হত। এবার তা হয়নি।
কাচিয়া ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের জয়দেব চন্দ্র দাস জানান, তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত অনেকগুলো প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। ওই উপকরণ দিয়ে তিনি দেড় শতাধিক বাহারি পণ্য বানাতে পারেন। করোনা পরিস্থিতিতে তাঁদের আয়-রোজগার বন্ধ। একই কথা জানালেন ওই গ্রামের কারিগর দীপিকা রাণী দে, সহদেব সাহা, কাকলী রাণী দে, লিটন চন্দ্র দাস সহ আরো অনেকে।
পক্ষিয়া ইউনিয়নের আট নাম্বার ওয়ার্ডের কারিগর সঞ্জয় দাস,মন্টু দাস, নিরঞ্জন দাস, বিরেন দাস জানান, এই পেশা ধরে রেখে এখন আর জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব না। এখন করোনা পরিস্থিতিতে বিক্রি না থাকায় কষ্টে আছি। অপরদিকে প্লাষ্টিক পণ্যের আগ্রাসন দিন দিন বেড়েই চলছে।
টবগী ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের শ্রীধাম চন্দ্র, আঁখি বালা জানান, দুই মাস কোন বিক্রি নাই। সংসার চালাতে কষ্ট হয়।
এ ব্যাপারে বোরহানউদ্দিন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক তারেক বলেন, প্রণোদনা দিয়ে হলেও সরকারের গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্যকে রক্ষা করা উচিৎ।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, করোনা দূর্যোগ কাটলে ওই শ্রেণিগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করে পূর্ণবাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
Leave a Reply