মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে আজ বুধবার রায় ঘোষণা করবেন আদালত। প্রাপ্তবয়স্ক এই আসামিদের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেন।
এ মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক অন্য ১৪ আসামির বিরুদ্ধেও সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারই বরগুনা নারী ও শিশু আদালতে এই সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হয়। যেকোনো দিন রায়ের তারিখ নির্ধারণ করতে পারেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সব আসামির পক্ষে-বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। সব শেষে নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী, ১ নম্বর সাক্ষী থেকে ৭ নম্বর আসামি হওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।
চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক। বাকি আসামিরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হূদয় ওরফে টিকটক হূদয়, মো. হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুন। এই ১০ আসামির মধ্যে মিন্নি জামিনে আছেন। পলাতক মুসা ছাড়া বাকিরা আছেন কারাগারে।
রায়কে ঘিরে বরগুনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সজাগ দৃষ্টি রাখছে পুলিশ। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও টহল দিচ্ছে রাস্তায় রাস্তায়।
রায় প্রসঙ্গে নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ গতকাল বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাস প্রতীক্ষায় ছিলেন তিনি আজকের দিনটির জন্য। প্রকৃত অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। রিফাতের মা ডেইজি আখতার বলেন, প্রকৃত অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলে আর কোনো সন্ত্রাসী কোনো মায়ের কোল খালি করার সাহস পাবে না। তিনি প্রকৃত অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান।
নিহত রিফাতের স্ত্রী এবং এই মামলার ১ নম্বর সাক্ষী থেকে ৭ নম্বর আসামি হওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, তাঁর মেয়ে মিন্নিকে অকারণে এ মামলার আসামি করা হয়েছে। রিফাত শরীফকে বাঁচাতে মিন্নির প্রাণপণ চেষ্টার দৃশ্য দেশবাসী দেখেছে। তার পরও তাঁকে প্রধান সাক্ষী থেকে মামলার ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে, যা দুর্ভাগ্যজনক। আদালত সব বিষয় বিবেচনায় রেখে তাঁদের প্রতি সুবিচার করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট ভূবন চন্দ্র হালদার বলেন, রিফাত হত্যা মামলার এ রায়ের দিকে গোটা দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে। প্রত্যেক আসামির সর্বোচ্চ সাজা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।
গত ১ জানুয়ারি এ হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে এই আসামিদের বিরুদ্ধে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
Leave a Reply