সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন
এইচ আর হীরা ॥ দক্ষিণাঞ্চলের সংসদীয় ২১ টি আসনের মধ্যে খ্যাতি আর ইতিহাস অনুযায়ী বরিশাল-৫ আসন সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনটিকে মর্যাদার আসন হিসেবেই মনে কওে বৃহত্তম দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি। তাইতো প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে চলে চুলচেরা বিশ্লেষন। এক্ষেত্রে বিএনপি কিছুটা এগিয়ে থাকলেও আওয়ামীলীগের চলছে নানান হিসাব-নিকাশ। কেননা বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে এ আসনের বিএনপির জয়ের পাল্লাই ভারী। শোনা যাচ্ছে এ আসনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ারকেই ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী থাকলেও মর্যাদার এ আসন এবং হেভিওয়েট প্রার্থী এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ারের বিপরীতে লড়াইয়ে কাকে বেছে নিবেন আ’লীগের হাইকমান্ড তা নিয়ে চলছে চলুচেরা বিশ্লেষন। ১৯৭৯ সাল থেকে সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী-ই টানা বিজয়ী হয়েছেন। সেই হিসেবে বলা যায় আসনটি বিএনপির ঘাঁটি! তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে সংসদ সদস্য (এমপি) হন আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরণ। অবশ্য সেবার নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। সরকার গঠনের মাস তিনেকের মাথায় শওকত হোসেন হিরণ মৃত্যুবরণ করলে ওই বছরের ১৫ জুনের উপ-নির্বাচনে এমপি হন তার স্ত্রী জেবুন্নেসা আফরোজ। স্থানীয়দের ভাষ্য, এমপি হওয়ার পর বরিশালের রাজনীতিতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি নগর আওয়ামী লীগের সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ। দলেও সেভাবে রাজনৈতিক কোনো সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারেননি তিনি। সরকারি দলের এমপি হয়েও তিনি গত পাঁচ বছরে বরিশাল সদর আসনের সাধারন জনগনের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেননি বলে জানা গেছে। এই সরকারের আমলে বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও বঞ্চিতই রয়ে গেছে বরিশাল সদর ৫ আসনটি। যদিও স্বামীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান পোক্ত করার সম্ভাবনা তার রয়েছে। যদিও হিরণের কর্মী-সমর্থকরা দলে কোণঠাসা রয়েছেন বলে হিরণ ঘরানার নেতাকর্মীদের দাবী। কেননা বর্তমানে বরিশাল মহানগর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ করছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল¬াহ। শেখ হাসিনা সরকারের ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে ফের আসনটিতে প্রার্থী হতে চান জেবুন্নেসা। প্রার্থী হতে চাইছেন মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারাও, যারা এরই মধ্যে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হতে বরিশাল সদর-৫ আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলিগের উপ-কমিটির সদস্য যুববন্ধু আরিফিন মোল্লা। কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে গত ১০ই নভেম্বর শুক্রবার সকালে তিনি দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এবং রবিবার বিকেলে জমা দেন। জানা যায়, তার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে একান্ত আশাবাদী আ’লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাছাড়া ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ ও দানবীর হিসেবে তার দীর্ঘদিনের পরিচিতির কারণে সর্ব সাধারণের কাছে তিনি যুববন্ধু খেতাবে ভূষিত হন এবং গত ২৫শে সেপ্টেম্বর মানবিক পদক্ষেপ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে আরিফিন মোল্লাকে যুববন্ধু পদক দেয়া হয়। এছাড়াও আরিফিন মোল্লার নির্বাচনী এলাকা বরিশাল সদরের সাধারন জনগনের মাঝে তাকে নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। বিগত দিনে আরিফিন মোল্লা বরিশাল জেলা-মহানগর আলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করা থেকে শুরু করে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি নিজ উদ্দ্যোগে পালন করে থাকেন। আরিফিন মোল্লা বলেন, বরিশালের রাজনীতির ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই, মহানগর ও জেলায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন, এখানে অনেকেই প্রার্থী হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখে। তবে তা নির্ধারণ করবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড জননেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি আরো বলেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার আওয়ামীলিগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সবার উদ্যেশ্যে একটি কথা বলেছিলেন যে, তিনি যাকে যোগ্য মনে করে দলের মনোনয়ন দিবেন সবার তার পক্ষেই কাজ করে যেতে হবে। তাই আমি আমাদের নেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী নৌকার মাঝি হয়ে যেই আসুক নৌকার বিজয়ের জন্য তার হয়েই কাজ করবো। অপরদিকে গত বুধবার গনভবনে আলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ সভা নেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের সংসদ নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবে তাদের কোনো ভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা। তাদেরকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে। দল যাকে নমিনেশন দিবে সবাইকে তার হয়েই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সবাই নেতা হতে চায়, কেউ নেতৃত্ব দিতে চায়না একারণেই এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যেকোনো সংগঠনের অভিভাবক হচ্ছে সভাপতি-সাধারন সম্পাদক আর তারাই যদি নমিনেশনের জন্য ফরম জমা দেয় তখন তো দলের অবস্থা করুন হবেই, তাই আপনারা সর্বপ্রথম নিজেদের সংগঠন ঠিক করুন। তিনি আরো বলেন দলীয় পদ পদবি প্রাপ্ত নেতারা নিজ সাংগঠনিক দ্বায়িত্ব রেখে এবং জন প্রশাসনের অথবা স্থানীয় সরকারের কোনো পদ রেখে জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করাটা বাঞ্চনিয় নয়। বরং তরুনদের জাতীয় নির্বাচনে সুযোগ দিয়ে অভিভাবক হিসেবে পিছনে থেকে কাজ করাটাই বুদ্বিমানের কাজ। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানাযায়, এক বা একাধিক বার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যারা কিনা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি তাদের তিরস্কার স্বরুপ এবার মনোনিত না করার শুপারিশ করেছে হাই কমান্ড । এসব দিক বিবেচনা করে বরিশাল-৫ আসনের সাধারন ভোটাররা বলছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহিত রাখতে আওয়ামীলীগ সরকার তারুন্যের প্রতি ঝুকবেন, নাকি গতানুগতিক ধারায় পূর্বের ন্যায় ঢিলেঢালা সম্ভাব্য প্রার্থী দিয়েই এবারো চলবে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি। যদি এমনি হয়, তাহলে কি পরিণতি অপেক্ষা করছে বরিশাল বাসির জন্যে। জনপ্রিয় এই সরকার পুনরায় যদি ক্ষমতায় আসীন হয় তাহলেও কি আরো পাঁচ বছর বরিশালবাসি অনুন্নত ভবিষ্যৎ নিয়েই বেঁচে থাকবে ? নাকি তারুন্যের দেশে তরুনদের জয় হবে।
Leave a Reply