বরিশাল মিডিয়ায় কান্নার প্রতিধ্বনি Latest Update News of Bangladesh

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বরিশাল মিডিয়ায় কান্নার প্রতিধ্বনি

বরিশাল মিডিয়ায় কান্নার প্রতিধ্বনি

বরিশাল মিডিয়ায় কান্নার প্রতিধ্বনি




শাকিব বিপ্লব॥ নাজিরপুল এলাকার বন্ধুবর সম্পর্কের মেহেদী হাসান মুরাদের মৃত্যুর একদিন পর গত বৃহস্পতিবার শোকগাথাঁ একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম।

 

কিন্তু ওর বেদনাতুর অকাল বিদায় নিয়ে লেখাটি আমার মনপূত হয়নি। বরিশাল রাজনীতি নিয়ে গঠনমূলক লেখায় ক্ষমতাসীন মহল বিরাগভাজন হওয়ার প্রতিফলে ডিজিটাল আইনে মামলা দেয়ায় আড়াই মাসের একমাত্র শিশু কণ্যাকে রেখে পলাতক জীবনে বসবাস।

 

এসময় হঠাৎ একমাত্র বোনজামাই ব্রেন স্ট্রোক করায় মানসিকভাবে স্বস্তি না থাকায় লেখার গভীরতায় নিমগ্ন হতে পারিনি বলেই নিজের আবেগকে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাছাড়া মেহেদী হাসান মুরাদের মৃতদেহ শেষবারের মত একনজর দেখার সৌভাগ্য আইনগত ভয় কেড়ে নেওয়ায় আফসোসের শেষ ছিলোনা।

 

সেই আফসোসের পথ যেনো আরও দীর্ঘায়িত হলো, সহকর্মী আকাশ আহমেদ মুরাদের মৃত্যুর আরেকটি হৃদয় ক্ষরণের ন্যয় খবরে। যুববয়সী ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান মুরাদকে নিয়ে লেখাটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ করে ভয়েস অব বরিশাল অনলাইন দৈনিক পোর্টালে পাঠিয়ে দিয়ে পলাতক আশ্রয়স্থলে ফিরেই খবর পেলাম ঘন্টা দুয়েক পূর্বে দৈনিক আজকাল পত্রিকার ব্যবস্থাপক যুবক আকাশ আহমেদ মুরাদ না ফেরার দেশে রওয়ানা দিয়েছে। অভিন্ন নামের দুই যুবকের অভিন্ন কারন আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দেহের ভিতর প্রাণ ফুরিয়ে যায়। মুরাদের পরিবার জানায়, শুক্রবার রূপাতলি মীরাবাড়ি সংলগ্ন মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে পরিবারের সাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার ঘন্টাখানেক পর বুকে ব্যথা অনুভব করে।একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

 

তার স্ত্রী স্বামীর সহকর্মী হিসেবে বিশ্বস্ত একসময়ের সাংবাদিকতা জগতে থেকে এখন শেবাচিম মেডিকেলে সরকারী চাকুরীজীবী স্বপনকে মুরাদের শারিরীক অবস্থার কথা জানিয়ে তাৎক্ষণিক সহায়তা কামনা করে। দ্রুত স্বপন বাসায় পৌঁছে স্থানীয়দের সমন্বয়ে শেবাচিমে নিয়ে আসে। বিকেল তখন চারটা। ততক্ষণে মুরাদ আর নেই। চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছে তাকে হাসপাতালে আনার পূর্বেই তার মৃত্যু ঘটে হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়ায়। কি বয়স ওর? এতোই বা কি চিন্তা ছিলো? হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো আলামত ছিলোনা। স্ত্রী ও দুই সন্তান এবং বাবা মাকে নিয়ে স্বচ্ছল জীবনের অধিকারী মুরাদ ছিলো বেশ টগবগে। দুই ভাই – দুই বোনের মধ্যে মুরাদ ছিলো বেশ মেধাবী। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে ¯œাতক উত্তীর্ণ এই যুবক ছিলো বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী।

 

সাধারণ ডিগ্রী অর্জন করলেও মুরাদ ব্যবসা-বাণিজ্যিক বিষয়ে অর্থাৎ একাউন্টিং-এ বেশ দক্ষ। অনেক বিবিএর ছাত্র তার কাছে হিসেব-নিকাশে হার মানে। সম্ভবত একারনেই সিনিয়র সাংবাদিক নেতা কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল সাহেব তার মালিকানাধীন এবং সম্পাদিত দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকায় একাউন্টিং শাখায় নিয়োগ দিয়েছিলেন। মনে পড়ে ২০১৫ সালের দিকে আমি যখন দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকায় প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেই , তখন মুরাদের সাথে প্রথম পরিচয় এবং আলাপে অনুমান করি তার মেধা। হিসেব নিকাশে দক্ষ হলেও সংবাদ নিয়েও তার বেশ সচেতনতা সময়ভেদে দেখতে পাই। প্রায়শ ভালো সংবাদ লিখে প্রকাশ করলেই বাহবা দিতে আমার চেয়ারের কাছে আসতেন এবং চা খাওয়ানোর জন্য অফিসের নিচে একসাথে নামতে পীড়াপীড়ি শুরু করতেন।

 

নাছোড়বান্দার অনুরোধ উপেক্ষা করার উপায় ছিলোনা বলেই চা খাওয়ার তালে সংবাদ তৈরীতে আরও উৎসাহ এবং তথ্য উপাত্ত জানান দিতেন, কোথায় আছে খবরের অন্তরালের খবর। অবশ্য বেশিদিন পত্রিকাটিতে একসাথে আমার কাজ করা সম্ভব হয়নি।

 

চলে গেলাম দৈনিক পরিবর্তন পত্রিকায়। কাকতালীয়ভাবে আবার মুরাদ ও আমি একত্রিত হলাম আজকের বার্তার সহযোগী আরেকটি দৈনিক আজকাল পত্রিকায়। ফজলুল হক এভিনিউ সড়কের কাকলীর মোড়েই এই অফিসটির অতোটা জনবল না থাকলেও মুরাদ বেশ মাতিয়ে রাখতেন। বেশ কর্মঠ থাকায় পত্রিকার কাজের পাশাপাশি সম্পাদক কাজী রাসেলের পারিবরিক দেখাশোনায় ব্যস্ততা অনুমান করতে দিতেন না। পত্রিকার গেটআপ মেকআপ নিয়ে প্রায় জায়গায় প্রশংসায় আমাকে উচ্চতায় উঠিয়ে রাখতেন, তা কানে আসতো। পরবর্তীতে আজকাল মালিকানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হলে আমাকে পত্রিকাটি কিনতে মুরাদ বেশ তাগিদ দিয়েছিলো । কিন্তু আমার মতো মেধাবিক্রি দিনমজুরের পক্ষে পত্রিকা কেনা কি সম্ভব?

 

একপর্যায়ে যখন চেষ্টা শুরু করার দরাদরির মাঝে কাজী রাসেল পত্রিকাটি প্রয়াত ডাক্তার আনোয়ার হোসেনের কাছে আমার প্রস্তাব অপেক্ষা বেশি অর্থে বিক্রি করে দেয়। মুরাদ ও কম্পিউটার শাখার রশিদ এই দুজন বাদে আমরা সকলে পত্রিকাটি ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হই আনোয়ার হোসেনের পূর্ব থেকে সাজানো লোকবল থাকায়।

 

সম্প্রতি আজকাল পত্রিকার প্রকাশক-স¤পাদক ও রাহাত আনোয়ার মেডিকেলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে পত্রিকাটি রুগ্নদশা দেখা দেয়। তবুও মৃত্যুপূর্ব মুরাদ ব্যবস্থাপক সম্পাদক হিসেবে পত্রিকাটির হাল ধরে রেখেছিলো। পাশাপাশি বরিশালের জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল ‘বরিশাল টাইমসের’ সাথে যুক্ত ছিলেন। সদ্য প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি হিসেবে বরিশাল জেলার দায়িত¦ নিয়েও জীবন-জীবিকায় মিডিয়া অঙ্গনকেই আকড়ে ধরেছিলেন।

 

একজন লেখক তার লেখায় মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তার একটি প্রতিবেদনের উক্তি ছিলো- কদম আলী একটু পরেই লাশ বের করবেন। এরপর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কার্যাদি পালন করে সমাহিত করা এই জীবনের শেষ আনুষ্ঠানিকতা। সত্যিই তাই। জ¤িœলে মৃত্যু অবধারিত, কিন্তু কখন তা থাকে অজানা। মুরাদও জানতো না শুক্রবার অপরাহ্নে রওয়ানা দিতে হবে পরপারে। আর ফিরে তাকানোর সময় নেই। অমোঘ সত্য ঘটলোই সেটাই। চল্লিশ বছর জীবনকাল পেরোনোর আগেই মেধাবী এই মিডিয়াকর্মী এই ধরাধাম থেকে বিদায় নিলেন। এভাবে ছোট পরিসরের বরিশাল মিডিয়া জগতে বছরের মাথায় মাথায় একেকজন মেধাবী না ফেরার দেশে রওয়ানা দিচ্ছেন বড়ো অসময়ে। কাঁদাচ্ছেন সহকর্মীদের।

 

ইত্তেফাকের মাইনুল হাসানের মৃত্যুর পর বিটিভির মনির হোসেন নেহাল,দৈনিক আমার দেশের বাবর আলী, অধুনালপ্ত দৈনিক আজকের কাগজের মীর মনির হোসেন, ইত্তেফাকের লিটন বাশার, সর্বশেষ একুশে টেলিভিশনের মিন্টু বসু এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, রেখে গেছেন দক্ষতা এবং মেধার স্বাক্ষর। কাঁদিয়েছেন মৃত্যুকালে, এখন স্মৃতির আয়নায় তাদের মুখ দেখা গেলেও শোনা যায় র্নিব কান্নার প্রতিধ্বনি। যেনো ওপারে থেকে বলছে,সময় পেলে বরিশাল মিডিয়াকে আরও কিছু দিয়ে যেতে পারতেন তাদের ভেতর থাকা মেধার ভান্ডারের ফসল। আর বিভাজন এবং নেতৃত্বহীনতার কারনে স্থানীয় মিডিয়ার যে হাল হকিকতে তাদের আফসোস, কী ঘটছে বরিশালে! সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা, ক্ষমতাসীনদের লেজুরবৃত্তি , প্রশাসনের তোষামুদিতে সাংবাদিকতার মান নিয়ে তারা যেনো অভিমানে আবার জানাচ্ছে , এই পরিস্থিতি থেকে চলে আসাই ভালো।

 

হয়তো আকাশ আহমেদ মুরাদের কানে প্রবীণ ও তরুণ প্রয়াত এই সাংবাদিকদের আর্তনাদ পৌঁছেছিলো কোনো এক কালভদ্রে। বিধাতাও চেয়েছে পৃথিবী থেকে এখনই প্রস্থানের মোক্ষম সময়। তাই চলে গেলেণ মুরাদ। স্বজন হারানোর কান্না-শোক একরকম। আর সহকর্মীদের কাছে এই কান্না একটু ভিন্নতর। কিন্তু এবার কান্নার প্রতিধ্বনি বেড়েছে বটে। কিন্তু আমরা কত অকৃতজ্ঞ যে মুরাদ মিডিয়াকর্মী হলেও তার মরদেহের প্রতি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের শ্রদ্ধার্ঘ্য জোটেনি।

 

প্রেসক্লাবের সামনে আনা হয়নি তার মৃতদেহ। তাইতো আফসোসে অসহায় সংবাদকর্মীদের হৃদয়ে একধরনের ক্ষরনে চাপা কান্না শোনা যায়, যা কিনা গগনবিদারিত কান্নার চেয়েও উচ্চস্বর। আজ শনিবার সকাল ১০ টায় রূপাতলি জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় মিরা বাড়ি এলাকার জামে মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে। হলে হতেও পারে চিরশায়িত হওয়ার পূর্বে মুরাদ শুনেছে সংবাদকর্মীদের অবহেলা-বঞ্চনার এই কান্নার প্রতিধ্বনি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD