সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনায় জেলা প্রশাসনের বিশাল দীঘীতে আকষ্মিকভাবে পৌর পানি সরবরাহের ট্যাংকির দূষিত পানি ছেড়ে দেয়ায় বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়ে মরে গেছে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছ। এতে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন পুকুরের ইজারা নেওয়া এক মৎস্য ব্যসায়ী।
খোঁজ নিয়ে জানা গছে, জেলা প্রশাসনের ওই দীঘীটি ইজারা নিয়ে মো. রিয়াদ মিয়া নামের একজন ব্যবসায়ী মাছ চাষ করে আসছিলেন। দীঘীর পারেই পৌরসভার নির্মাণাধীন পানির ট্যাংকির ক্যামিক্যাল মিশ্রিত দূষিত পানি ওই পুকুরে ছেড়ে দেয়ার ফলে গত তিন দিন ধরে পুকুরের পানিতে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে পুকুরে চাষ করা বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছ মরে ভেসে ওঠে।
মৎস্য চাষী মো. রিয়াদ মিয়া জানান, বাংলা ১৪২৭ সনের ১ বৈশাখ থেকে পরবর্তি তিন বছরের জন্য আটলাখ টাকায় পুকুরটি বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নেন তিনি। এরপর ওই পুকুরে মাছের চাষ শুরু করেন। সম্প্রতি কাউকে কিছু না জানিয়ে পুকুরের পশ্চিম পাশে বরগুনা পৌরসভার নির্মানাধীন পানির ট্যাংকির ক্যামিক্যাল মিশ্রিত দূষিত পানি পাইপ দিয়ে ওই পুকুরে ছেড়ে দেয় পৌর পানিসরবারাহ ট্যাংকি নির্মাণের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার রমনার জিলানী ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পুকুরের প্রকৃত মালিক জেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে এভাবে পরপর দুই বার ট্যাংকির বিষাক্ত পানি পুকুরে ছেড়ে দেয়ার ফলে গোটা পুকুরের পানিতে দূষণের সৃষ্টি হয়। যার ফলে গত তিন চারদিনে পুকুরের সকল মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে।
রিয়াদ মিয়া আরও জানান, মাছ চাষে তার এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। খাবার ও ওষুধের দোকানে কয়েক লাখ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। মাছ বিক্রি করে টাকা শোধ করার চুক্তিতে দোকান থেকে বাকিতে খাবার ওষুধ কিনেছেন তিনি। এমতাবস্থায় সব শেষ হয়ে গেছে তার। তিনি এখন নিঃস্ব। ব্যবসা তো দূরে কথা, তিনি এখন বকেয়া পরিশোধ করবেন কী করে তা তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে বরগুনা পৌরসভার পানির ট্যাংকি নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাজধানী ঢাকার রমনা এলাকার জিলানী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কাজী মোঃ জিলান হায়দার মুঠোফোনে বলেন, ‘নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় লিকেজ আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য আমরা ট্যাংকিতে পানি ভরেছিলাম। ওই পুকুরটি যে ইজারা নিয়ে কেউ মাছ চাষ করছে এটা আমাদের জানা ছিলোনা। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ ওই মাছচাষীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
এ ঘটনার পর বরগুনা পৌরসভার মেয়র মোঃ শাহাদাত হোসেন ও বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সরেজমিনে পুকুরটি পরিদর্শন করে মাছ ব্যবসায়ীকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। বরগুনা পৌরসভার মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ভুলে মাছ ব্যবসায়ীর বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য ব্যবসায়ীকে কিভাবে সহায়তা করা যায় এ নিয়ে আমরা দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।থ
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘তিনি সরেজমিনে ওই পুকুরের পানি ও মাছের অবস্থা দেখেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ ইজারাদার ও মৎস্যব্যবসায়ী যাতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে বিষয়ে সাবিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply