মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০২:১১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। নেই কোনো সন্তান। বেঁচে নেই মা-বাবা, ভাই-বোন। সহায় সম্পদ বলতে কিছুই নেই তার। প্রতিবেশীর জায়গায় ঘর তুলে পেয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। এক কথায় এই দুনিয়ায় আপন বলতে কেউ নেই তার। এমনই একজন অসহায় মানুষ বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ হেউলিবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা খাজিদা বেগম (৫১)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বামীর মৃত্যুর পর অসহায় খাদিজার বসবাস অন্যের বাড়িতে। বাসাবাড়িতে কাজ করে চলে তার সংসার। এখন পর্যন্ত পাননি বয়স্ক কিংবা বিধবাভাতার কার্ড। এরই মধ্যে অসুস্থ হন খাদিজা। পাইলসসহ নানা জটিল রোগ শরীরে বাসা বাঁধলেও অর্থাভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার সুযোগ হয়নি তার। সুযোগ হবেই বা কি করে; বাড়ি থেকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার গাড়ি ভাড়াও নেই খাদিজার।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন খাদিজা। এ সময় অটোগাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে কাঁধের হাড় ভেঙে যায় তার। স্থানীয়রা তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল যেতে পরাছেন না খাদিজা। হাড়ভাঙা অবস্থায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন তিনি।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বরগুনা হাসপাতালের বেডে হাড়ভাঙার ব্যথায় কাতরাচ্ছেন খাদিজা বেগম। প্রচণ্ড ব্যথায় তার চোখ গড়িয়ে পড়ছে পানি। জানতে চাইলে খাদিজা বেগম বলেন, আমি বিধবা। আমার কোনো সন্তান নেই। নেই কোনো আপনজন। অন্যের বাড়িতে থেকে বাসাবাড়িতে কাজ করে বেঁচে আছি। এই দুনিয়ায় আপন বলতে কেউ নেই আমার। আমি বড় অসহায়।
তিনি বলেন, শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় আমার কাঁধের হাড় ভেঙে গেছে। বরিশাল হাসপাতালে যেতে বলেছেন ডাক্তার। আমার টাকা নেই, কিভাবে বরিশাল যাব আর কিভাবে চিকিৎসা করাব। আমারে কে নিয়ে যাবে বরিশাল হাসপাতালে, কে দেবে চিকিৎসার টাকা। আমার যে কেউ নেই। প্রতিবেশী মিজান বলেন, খাদিজা বেগম পাইলসের রোগী। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় কাঁধের হাড় ভেঙে গেছে তার। জরুরিভাবে তার চিকিৎসা দরকার। কিন্তু টাকার অভাবে তার চিকিৎসা চলছে না। হাসপাতালের বেডে হাউমাউ করে কাঁদছেন খাদিজা। চিকিৎসক বলেছেন ৫০ হাজার টাকা হলে তার চিকিৎসা করা সম্ভব।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক জিকু শীল বলেন, বৃদ্ধা খাদিজা বেগম গুরুতর আহত হয়েছেন। তার হাড় ভেঙে গেছে। তার যে চিকিৎসা দরকার তা আমাদের হাসপাতালে নেই। এজন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খাদিজা বেগম বলেছেন টাকার অভাবে বরিশাল যেতে পারছেন না। এজন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের বেডেই পড়ে আছেন তিনি।
সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, আসলে খাদিজা বেগম অসহায়। আপন বলতে কেউ নেই তার। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আক্তার বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না, এখন জানলাম। বৃদ্ধা খাদিজা বেগমের বিধবাভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেব। পাশাপাশি তাকে কিছু চিকিৎসা সহায়তা দেব। একই সঙ্গে তার চিকিৎসা সহায়তার জন্য দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।
কোনো হৃদয়বান দানশীল ব্যক্তি অসহায় খাদিজা বেগমকে সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করুন জাগো নিউজের বরগুনা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম মিরাজের সঙ্গে। মোবাইল নম্বর (০১৯১২-৭০২২২৩, ০১৭১৩-৪০০৮১৭)।
Leave a Reply