সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ বুধবার (২৫ মার্চ) দুপুর ২টা থেকে ঝালকাঠি জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এরপর থেকে ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জেলার মূল সড়কগুলো ফাঁকা থাকলেও শহর ও শহরতলীর অলিগলি এবং প্রত্যন্ত এলাকার ভিতরের দোকানগুলোতে ভিড় করছে জনসাধারণ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে সেনা সদস্যরা ঝালকাঠিতে এসে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং মাঠে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। তারা জেলা শহরসহ ৪ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় টহল দিচ্ছে।
সরেজমিন ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, বুধবার দুপুর ২টা থেকে ঝালকাঠি জেলাকে লক ডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক. উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে পুলিশ।
বুধবার বিকেলে প্রশাসনের তৎপরতার কারণে মূল সড়ক ফাকা হয়েছে। সচেতন জনসাধারণ তার নিজ বাসা-বাড়িতে অবস্থান করছে। অসচেতন জনসাধারণ তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় মূল রাস্তায় থাকতে না পারায় তারা শহর ও শহরতলীর ভিতরের গলির দোকানে ভিড় করছে।
জেলার ২ পৌরসভা ও ৪ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মূল সড়কে সংযোগ সড়কে গড়ে ওঠা ছোট-খাটো চায়ের দোকানে আড্ডা জমাচ্ছে। তারা বিভিন্ন জনে বিভিন্নভাবে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে আড্ডা দিচ্ছে। এদের মধ্যে শতকরা ২জনে মাস্ক ব্যবহার করলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অসচেতন তারা।
গ্রাম্য এলাকার মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানান, করোনা শহরের ও ধনী ব্যক্তিদের জন্য রোগ। এটা আমাদের কাছে আসবে না। আমরা নামাজ পড়ি, পাক-সাফ থাকি। আমাদের কিছু হবে না। এক মহিলা জানান, আমরা সাদা পাতা (তামাক) দিয়ে পান খাই, যারা পান খায় তাদের কাছে করোনা যায় না।
ঝালকাঠি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক (ইংরেজি) বিএম শাহিদুল ইসলাম জানান, ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- Fools rush in where angels fear to tread. অর্থাৎ,স্বর্গদূতও যেখানে পা ফেলতে ভয় পায়, মূর্খ সেখানে দৌঁড়ে যায়। আপনাদের মতো আমিও পরিবার নিয়ে একপ্রকার স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছি। তারপরও মঙ্গলবার একটু ইমার্জেন্সি কারণে মার্কেটে যেতে হলো। অবশ্য সকালে একবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কলেজেও যেতে হয়েছিলো। যাহোক, ভাবলাম রাত ৯টার দিকে যাবো, নিশ্চয় তখন বাজার একেবারে ফাঁকা পাওয়া যাবে।
রাত পৌনে নয়টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। চার্জরত মোবাইল বাসায় রেখে গেলাম। সাথে টর্চ নেই। রাস্তায় নেমে দেখি বেশ অন্ধকার। কিছুক্ষণ মানুষের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে একটু ভয় ভয় লাগছিল। একবার ভাবলাম, কেউ কোথাও নেই, ফিরে যাই। কিছুক্ষণ পর কিছুদূর এগিয়ে দেখি রাস্তায় রিক্সা-সিএনজি-পথচারীর আনাগোনা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুমাত্র কম নয়। অধিকাংশের মধ্যে একটি ড্যামকেয়ার ভাব।
লক্ষ্য করলাম, পরম আয়েশে চলন্ত ৮ জন প্যাসেঞ্জারভর্তি অটোরিকশা আর ২জন প্যাসেঞ্জারবাহী এক রিকশাওয়ালার ‘করোনা’ নিয়ে অজ্ঞতাপূর্ণ, তাচ্ছিল্যভরা কথোপকথন। লোভ সামলাতে পারলাম না। বললাম, শেখ সাহেব, সাবধানে থাইকো। শেখের আত্মবিশ্বাসী তড়িৎ জবাব- কলেরা মোগো কিচ্ছু কত্তি পারবেনা, স্যার। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, আমি যতই সবাইকে এভয়েড করতে চাই, ততই আমার গায়ের উপরে এসে পড়ে! জানিনা, পরিবারের জন্য আমি গতরাতে কি বহন করে এনেছি!
ভয়ের প্রধান কারণ, এখানে সম্প্রতি প্রবাস ফেরত মানুষের সংখ্যাধিক্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল বলছেন, “বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১জন থেকে ১ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ৬৭ দিন।২য় ১লাখ আক্রান্ত হতে সময় লেগেছে ১১দিন। কিন্তু ৩য় ১লাখ আক্রান্ত হতে সময় লেগেছে মাত্র ৪ দিন।
মূলত নজিরবিহীন ছোঁয়াচে এই রোগটি ছড়ায় জ্যামিতিক হারে। আর জনগোষ্ঠী বেপরোয়া ও বেআক্কেল হলে তো কথাই নেই। দেখি কি হয়, দেখি কি হয়। ধরি মাছ না ছুঁই পানি, এই মনোভাব বাঙালির ঐতিহ্য বলা হয়ে থাকে, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে যখন কোমরে গামছা দিয়ে মাত্র কয়েকজন ইংরেজ ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন পলাশীর প্রান্তরের অদূরেই কৃষকেরা গলা ছেড়ে গান করে হালচাষরত ছিল। তারা যদি সেদিন তাদের ক্ষেতের একটি করে ঢিলও ইংরেজকে ছুঁড়ে মারত, তাহলে ইংরেজ সেদিন চর্বিত ঘাসের ন্যায় হয়ে যেতো।
বাঙালিকে দু’শ বছরের জন্য স্বাধীনতা হারাতে হতো না। কিন্তু “তৈলঢালা স্নিগ্ধতনু নিদ্রালসে ভরা” বাঙালি বুঝতেই চায়না যে, সময় গেলে সাধন হয় না। এই বাঙালি আবহমান বাঙালি, এর মধ্যে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-নির্ধন, শাসক-শাসিত, পেশাজীবী- পলিছিমেকার সকলেই আছেন।
আমাদের আছে কয়েকডজন ঢিভি চ্যানেল, প্রতিদিন বের হয় প্রায় দু’শ পত্রিকা। তারপরও সাধারণ মানুষের কাছে ‘করোনা’ নামটিই সঠিকভাবে আমরা পৌঁছাতে পারিনি, এ আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। আসুন, সচেতনতা সৃষ্টির কাজটিই করি। এখনো সময় আছে।
তিনি আরো জানান, আমার পরিবার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং আপনজন আপনারা, সকলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। ভালো থাকুন, সাবধানে থাকুন সকলে। আসুন, আশাবাদী হই, আকাশের কার্নিশে জমে থাকা ওই মেঘ বজ্র হয়ে আঘাত হানবেনা; আশীর্বাদের বৃষ্টি হয়ে সবুজ-শ্যামলিমায় ভরে দেবে আমাদের এই রক্তে কেনা সোনার বাংলাদেশকে আর এই সুন্দর ধরণীকে। বিপদ কেটে যাবে অচিরেই, বিশ্ব প্রতিপালকের সাহায্য অতি সন্নিকটে,যদি আমরা বিশ্বাসী হই।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, বিশেষ কাজ ছাড়া বুধবার দুপুর ২টা থেকে সকলকে বাসার বাইরে না যেতে অনুরোধ করছি। এ নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply