মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের ছাত্র সাহেদুল ইসলাম সিফাত। পড়াশোনার ফাঁকেই বিভিন্ন ডকুমেন্টারি নিয়ে কাজ করতেন। আর এ ডকুমেন্টারির কাজ করতে গিয়ে বিনা দোষে ১০ দিন জেলে ছিলেন তিনি। পুলিশের করা মামলায় ১০ দিন জেলে থাকলেও সিফাতকে ‘নির্দোষ ছেলে’ উল্লেখ করে কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল বরগুনা পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। তবে সেটিও আমলে নেয়নি কক্সবাজার পুলিশ।
বরগুনা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয় সিফাতকে আটকের পরদিনই বরগুনার বামনা গ্রামের বাড়িতে যায় স্থানীয় পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে দুই আগস্ট পাঠানো চিঠিতে তারা জানায়, মাস খানেক আগে সিফাতের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। পরিবারের অনুমতি নিয়েই কক্সবাজারে তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজে নিয়ে যান সিফাতকে। তার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠনের কোনো রেকর্ড নেই পুলিশের খাতায়।
আটকের ১০ দিন পর মুক্তি মেলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সহযোগী ও তথ্য চিত্র নির্মাণের ভিডিওগ্রাফার সাহেদুল ইসলাম সিফাতের।
মুক্তির জন্য ১০ দিন কক্সবাজারে ঘুরে বেরিয়েছেন সিফাতের স্বজনরা। ১০ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার আদালত পুলিশের করা হত্যা চেষ্টা মামলায় জামিন দেয় সিফাতকে। একইসঙ্গে পুলিশের করা সব মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছে ন্যস্ত করা হয়।
আদালত প্রাঙ্গণে সিফাতের আইনজীবী ও জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, সিফাতের জামিন মঞ্জুর হয়েছে। দুই মামলায় সিফাতকে জামিন দেয়া হয়েছে। আমরা পুলিশের সাজানো মামলা থেকে সিফাতের মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে র্যাবের কাছে হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছিলাম। আদালত সে আবেদনে সাড়া দিয়েছে।
জামিনের পর কারাগারের সামনে সিফাতকে নিতে এসে সন্তুষ্টির কথা জানান সিফাতের স্বজনরা। সিফাতের নানা আইয়ুব আলী হাওলাদার বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনার সাক্ষী সিফাত। তাকে মামলা দিয়ে সরিয়ে রাখার উদ্দেশ্য ছিল পুলিশের।
৯ আগস্ট দুপুরে জামিন পান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের আরেক সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথ। সিফাত ও শিপ্রা একই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া শামলাপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লিয়াকতসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করেন নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে টেকনাফ থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে রুজু এবং র্যাব-১৫ কে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
আদালত সূত্র জানায়, আদালতের আদেশ মতে মামলাটি বুধবার রাতেই টেকনাফ মডেল থানায় নিয়মিত একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
প্রদীপ ও লিয়াকত ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন- এসআই নন্দলাল রক্ষিত, এসআই টুটুল, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও কনস্টেবল মো. মোস্তফা। এ মামলায় নিহত সিনহা রাশেদ খানের সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতসহ ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আদালতে র্যাবের করা রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে তিনজনকে সাতদিন করে রিমান্ড ও চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয় আদালত। পরে এ আদেশ পরিবর্তন করে সাতজনকেই রিমান্ড দেয়া হয়। ওই সময় বাকি দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এর আগে, প্রদীপ কুমার দাশ ও টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর তদন্তকেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সাতজনকে একসঙ্গে আদালতে হাজির করা হয়। বাকি দুই আসামি শেষ মুহূর্তে আত্মসমর্পণ করেননি। প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ হেফাজতে কক্সবাজার আদালতে নেয়া হয়।
Leave a Reply