শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ আবরার ফাহাদ। দুর্দান্ত মেধাবী এক ছাত্র ছিলেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মেধার পরিপূর্ণ স্ফুরণের আগেই ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে নিজ ক্যাম্পাসে একদল সতীর্থের রাতভর নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারান। আবরার ফাহাদের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন গতকাল সোমবার ছেলের ছবি বুকে আঁকড়ে পড়ে ছিলেন মা রোকেয়া খাতুন। বাবা বরকত উল্লাহ ছেলে আবরার হত্যা মামলার সাক্ষ্য দিতে রয়েছেন ঢাকায়। গতকাল থেকে এ মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
গতকাল দুপুরে আবরারের বাড়িতে গেলে মা রোকেয়া বেগম, ছোট ভাই আবরার ফায়াজের সঙ্গে দেখা হয়। রোকেয়া খাতুন আবরারের কয়েকটি ছবি হাতে নিয়ে বিছানায় বসে সেগুলো দেখতে দেখতে ছেলের স্মৃতিচারণা করছিলেন। বলছিলেন, ‘এক বছর আগে এই দিনের পরের দিন আমার ছেলে আমাকে ছেড়ে ঢাকায় গেল। আর সেই রাতেই ওরা বিনা দোষে আমার হীরার টুকরা ছেলেকে নির্মম নির্যাতন করে মেরে ফেলল! ছেলেটা ঢাকায় হলে পৌঁছেই আমাকে ফোন করেছিল। সেই ফোনই যে শেষ ফোন, তা কি আমি জানতাম! আমার কলিজার টুকরারে ওরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলল!’
হু হু কান্না করতে করতে তিনি আবার বলতে থাকেন, ‘আমার ছেলের হত্যাকারী ২৫ আসামির বিরুদ্ধে আদালত চার্জ গঠন করেছেন। বাদী আবরারের বাবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। আমার ছেলেকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড চাই।’ স্মৃতি হাতড়ে রোকেয়া খাতুন আনমনে বলতে থাকেন, ‘শেষ কোরবানির ঈদের দিন আমার দুই ছেলে পাঞ্জাবি পরে একসঙ্গে নামাজে যাওয়ার সময় তাদের খুবই সুন্দর লাগছিল। আমার মনে হয়েছিল, দুই ছেলের সঙ্গে একটা ছবি তুলি, কিন্তু মনের কথা ওদের বলতে পারিনি। ছেলেদের সঙ্গে আমার কোনো ছবি নেই। এখন ফেসবুক থেকে দু-একটি ছবি নিয়ে আমার কাছে রেখেছি।’ আবরারের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ বলেন, ‘ভাইয়ার এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর মায়ের কান্না আর থামছে না। সারাক্ষণ ঘরে বসে নামাজ-কালাম করেন, ভাইয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে সময় দিন পার করেন। আমিও ভাইয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
আবরারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্বজনরা কাল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এ গ্রামেই কবরে শুয়ে আছেন আবরার।
Leave a Reply