মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জেলা বরগুনার মানুষের জীবনযাত্রা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক, জেলে, শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষ। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসরত বরগুনার ৬ উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ।
বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ৩ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর সকাল ৬টা পর্যন্ত বরগুনায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৩৪ মিলিমিটার। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ অক্টোবর ১৪৫ মিলিমিটার। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪০ মিলিমিটার।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বরগুনার প্রধান তিনটি নদীতে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে জোয়ারের পানি। অস্বাভাবিক জোয়ারের চাপে প্লাবিত হয়েছে বরগুনা পৌর শহর, বেতাগী পৌর শহর ও আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা। এ ছাড়া বরগুনা সদর উপজেলার মাঝেরচর, বড়ইতলা, পোটকাখালী, বাওয়ালকার, মাইঠা, খাজুরতলা আবাসন, ফুলতলা আবাসন। তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ফকির হাট, সোনাকাটা, নিদ্রাসকিনা, তেতুলবাড়িয়া, আশার চর, নলবুনিয়া, তালুকদারপাড়া, চরপাড়া, গাবতলী, মৌপাড়া, ছোটবগী। আমতলী উপজেলার ঘোপখালী, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম আমতলী, ফেরীঘাট, পুরাতন লঞ্চঘাট, আমুয়ারচর। বেতাগীর ঝোপখালী, কেওয়াবুনিয়া,কালিকাবাড়ী, বামনার, রামনা, অযোধ্য, পাথরঘাটার, রুহিতা, পদ্মা, বাদুরতলা, চরদোয়ানী, কুপধন, কাকচিড়া এলাকাসহ বরগুনা ৬ উপজেলার ৭৮টি গ্রাম। এসকল গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পানিবন্ধী হয়ে দিনানিপাত করছেন। ভোগান্তিতে পড়ছে নারী শিশুসহ বয়োবৃদ্ধরা।
বরগুনা সদর উপজেলার নলী গ্রামের বাসিন্দা নুরুজ্জামান বলেন, টানা বর্ষণে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বরগুনা শহরে গিয়ে আমাদের অফিস করতে হয়। কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বরগুনা পৌর শহরের দিনমজুর মনির হোসেন বলেন, কাঠমিস্ত্রির জোগাইল্লা (সহকারী) কাম (কাজ) কইরা সংসার চালাই। বৃষ্টিতে গত এক সপ্তাহ ধইরা কোনো কাম পাই নাই। ঘরে বইয়া বইয়া যা আছেলে সব খাওয়া শেষ। এইরহম আরো কয়েকদিন চলতে থাকলে মাইয়া পোয়া লইয়া না খাইয়া থাকতে হইবে।
মাঝেরচরের কৃষক জয়নাল বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে পুরো মাঝেরচরের সব ফসলি জমি ও ঘের তলিয়ে গেছে। আম্ফানে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে এবার এই বৃষ্টি ও জোয়ারে সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ডিসি মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, টানা বর্ষণ ও জোয়ারে প্লাবিত এলাকাগুলো আমরা জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করেছি। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত বরগুনার নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। এরইমধ্যে আমরা শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করেছি।
Leave a Reply